-
ঝিনাইদহে ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর বন্ধনে প্রীতি ফুটবল ম্যাচ
September 6th, 2018এলিস হক, ঝিনাইদহ হতে
বিডিস্পোর্টস২৪ ডটকম
ঝিনাইদহ, ৬ সেপ্টেম্বর: ভালোয় ভালোয় শেষ হলো ঝিনাইদহ সফরে আসা ভারতের পশ্চিমবাংলা রাজ্যের কল্যাণী মিউনিসিপ্যালিটি স্পোর্টস একাডেমি এবং ঝিনাইদহ জেলা যুব দলে মধ্যকার প্রীতি ফুটবল খেলা। কোনো অঘটন ছাড়াই ঝিনাইদহ জেলা যুব দল ১-০ গোলে সফরকারী কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমিকে হারিয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে উপস্থিত হন কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমির খুদে খেলোয়াড়সহ দলীয় কোচ ও কর্মকর্তারা। খেলা গড়ায় বিকাল সাড়ে ৪টায়। তার আগে দুই দলের খেলোয়াড়দের পরিচিতি পর্বে মিলিত হন ঝিনাইদহ পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু। ভারতের পশ্চিমবাংলার কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমির প্রধান সমন্বয়কারী কর্মকর্তা মিলন ঘোষ, ম্যানেজার প্রিয়রঞ্জন নাগ, কোচ দেবব্রত বিশ্বাস, সহকারী কোচ প্রশান্ত সরকার, ফিজিও প্রবীর চক্রবর্তী, সহকারী ফিজিও বরুণ নন্দী ও মিডিয়া ম্যানেজার রঞ্জিত সরকার এই সময়ে দুই বাংলার ক্রীড়া ব্যক্তিগণ পরস্পরের মধ্যে কুশল ও শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এই সময় ঝিনাইদহবাসীরা অতিথিদের সাদর সম্ভাষণ জানিয়ে হাতে ‘রাখী বন্ধন পরিয়ে বরণ করে নেন।
মাঠে খেলা শুরুর পূর্বে মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে ধারাবর্ণনার মাধ্যমে সফররত কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমির অতিথিবৃন্দকে স্বাগত জানান ঝিনাইদহ জেলা ক্রীড়া সংস্থার সিনিয়র নির্বাহী সদস্য ও বাংলাদেশ কাবাডি ফেডারেশনের কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন।
প্রথমার্ধের ২ মিনিটের সময় ঝিনাইদহ যুব দলের প্রথম আক্রমন করার সুযোগ পায়। ১২ নম্বর জার্সিধারী শাকিল বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন। কল্যাণী স্পোর্টস দলের গোলকিপার সুদীপ হালদারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেন না। তিনি বলের তলায় কিক করেন। বারের উপর দিয়ে বল চলে যায়। খেলার প্রথম ১০ মিনিটে ঝিনাইদহ যুব দল রাইট উইং দিয়ে একাধিকবার এ্যাটাক করে। কিন্তু সফল হয়নি। কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমির অতন্দ্র প্রহরী ১৪ নম্বর খেলোয়াড় সন্দ্বীপ মান্ডী ও ৩ নম্বর জার্সি অধিনায়ক নীলকমলের কড়া ট্যাকলিংয়ের কারণে তাদের প্রতিটি আক্রমণকে নস্যাৎ করে দেন।
৯ মিনিটে ঝিনাইদহের আগুয়ান ডিফেন্ডার ৩ নম্বর জার্সি মুন্না বিপক্ষের ডানপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে আলতোভাবে কিক করেন। বল উড়ে গিয়ে গোলবারের উপর ঘেঁষে বেরিয়ে যায়।
১৪ মিনিটে ঝিনাইদহের ৬ নম্বর খেলোয়াড় রিয়াজের পাস হতে বল পেয়ে যান ১২ নম্বর জার্সি শাকিল এবং ডি বক্সের ভেতরে ঢুকে পড়েন। শাকিলের আচমকা শট কল্যাণী দলের সন্দ্বীপ মান্ডীর পায়ে লেগে কর্ণারের বিনিময় রক্ষা করে।
১৫ মিনিটে ঝিনাইদহের ১১ নম্বর জার্সিধারী রিজন কর্ণার কিক করেন। বল উড়ে আসে মুন্নার কাছে। মুন্না সুন্দরভাবে হেড করলে কল্যাণীর গোলকিপার সুদীপ হালদার বল বিপদমুক্ত করেন।
২২ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডি বক্সের বাইরে হতে মাঝখান দিয়ে বল নিয়ে যান ঝিনাইদহের শাকিল। কিন্তু অরক্ষিত অবস্থা হতে মুক্ত করে দেন কড়া ট্যাকলে থাকা কল্যাণী দলের স্টপার সন্দ্বীপ মান্ডী ও বিকাশ মুর্মু। ঝিনাইদহের ৯ নম্বর জার্সি রনিকে বোতলবন্দি করে দেন কল্যাণীর দলনায়ক নীলকমল।
২৫ মিনিটের সময় ঝিনাইদহের রনি গোল করেছিলেন। কিন্তু ততক্ষণে শাকিল অফসাইড ধরা পড়ায় গোল বাতিল করে দেন রেফারি শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ।
পশ্চিম বাংলার ৪ বার প্রবল বেগে আক্রমন চালিয়েছিল ঝিনাইদহ যুব দলের উপর। হয় কোনোরকমে বিপদমুক্ত করেন ঝিনাইদহের রক্ষণভাগের খেলোয়াড়েরা..নয়তো গোলকিপার সোহানের দৃঢ়তার কারণে দলটি বেঁচে যায়। বল নিয়ে বার উপরে খেলতে দেখা যায় কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমীর ১০ নম্বর জার্সি কিশান সোরেন ও ১১ নম্বর জার্সি উইঙ্গার পিন্টু মুর্মু। একবার তো ১২ নম্বর খেলোয়াড় পরিমল হেমব্রাম চমৎকার শট করেও গোলের সুযোগ নষ্ট করেন।
খেলায় বেশির ভাগ সময় মাঝমাঠের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখে খেলেন দুই দলের খেলোয়াড়েরা। অবশ্য ড্রাগ আউটে দাঁড়িয়েছিলেন পশ্চিমবাংলার প্রধান কোচ দেবব্রত বিশ্বাস ও সহকারী কোচ প্রশান্ত সরকার। তাদের চেঁচামেচিতে কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমীর খেলোয়াড়েরা ক্ষণে ক্ষণে খেলার পজিশন দারুণভাবে খেলতে সক্ষম হয়। ঝিনাইদহ যুব দলের কোচ আহসানুজ্জামান ঝুন্ট তিনিও কিন্তু কম যাননি…সমানে চেঁচিয়েছেন দলীয় খেলোয়াড়দের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন।
বিরতির পর উভয় দলের খেলোয়াড়েরা নতুন উদ্যম খেলতে শুরু করে। কিন্তু দুই দলই গোলের দেখা না পাওয়ায় মাঠে উল্লেখযোগ্য স্থানীয় দর্শকদের বেশ হতাশ হয়ে পড়তে দেখা গেছে। ঝিনাইদহের রিয়াজ-শাকিলের মধ্যে বল দেয়া নেয়া ভালো সমঝোতার পরিলক্ষিত হলেও গোল দেয়ার ক্ষেত্রে বেশ অস্থিরতায় ভোগেন তারা।
দ্বিতীয়ার্ধের প্রায় ৫৫ মিনিট পর্যন্ত কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমীর সকল খেলোয়াড়েরা একটু ডিফেন্সিভ কায়দায় খেলার দিকে মনোযোগ দেয়। কল্যাণী স্পোর্টসের রক্ষণভাগের ত্রয়ী খেলোয়াড় শিবম সিং, সন্দ্বীপ মান্ডী, নীলকমল ও বিকাশ মুর্মু ঐ ঝিনাইদহের দলনায়ক টিটুকে অকেজো করে দেন। দুবার প্রতিআক্রমণ চালিয়েছিল কল্যাণীর সেন্টার ফরোয়ার্ড খেলোয়াড় সিকান্দার মন্ডল এবং সুফল সরকার। কিন্তু ঝিনাইদহের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় মুন্না ও শানু চমৎকারভাবে প্রতিহত করেন।
দ্বিতীয়ার্ধের ৫৬, ৬০ মিনিটে ঝিনাইদহের টিটু অমার্জনীয়ভাবে গোলের সুযোগ হাতছাড়া করেন। কল্যাণীর ফরোয়ার্ড বদলী খেলোয়াড় সৌরভ পালের তীব্রশট গোলকিপার সোহান কোনোরকমে রক্ষা করেন। খেলা শেষ হতে তখনো ৮ মিনিট বাকি ছিল।
দ্বিতীয়ার্ধের ৬২ মিনিটে কল্যাণীর বামপ্রান্ত দিয়ে বল নিয়ে বক্সের মধ্যে প্রবেশ করেন ঝিনাইদহের টিটু। টিটুকে প্রায় রাফচার্জ ট্যাকলে নিষিদ্ধসীমানার মধ্যে ফেলে দেন কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমীর রক্ষণভাগের বদলী খেলোয়াড় সুমিত বাসফোর। ফলে রেফারি শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ সরাসরি পেনাল্টির নির্দেশ দেন। এবং এ থেকে ঝিনাইদহের ফরোয়ার্ড শাকিল পেনাল্টি কিকে গোল করে দলকে জিতিয়ে আনেন (১-০)। এরপর কোনো পক্ষই আর গোলের দেখা পায়নি।
পেনাল্টি গোল খাওয়ার পরেও হাল ছাড়েনি কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমীর খেলোয়াড়েরা। দুইবার অর্থাৎ ৬৪ ও ৬৭ মিনিটে বদলী খেলোয়াড় অংকর বিশ্বাস ও সিকান্দার মন্ডল গোল দেয়ার সুযোগ পেয়েছিলেন। কিন্তু তাদের দুইবার প্রচেষ্টাকে নস্যাৎ করে দেন ঝিনাইদহের গোলকিপার সোহান।
খেলারই এক পর্যায়ে অর্থাৎ দ্বিতীয়ার্ধের ৪৫ মিনিটের সময়ে একটা ঘটনা ঘটে। নিজেদের শিবিরে কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমীর রক্ষণভাগের খেলোয়াড় সন্দ্বীপ মান্ডীকে বার কয়েকবার ফাউল করে খেলছিলেন ঝিনাইদহের শাকিল। এবার বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে শাকিল পেছন এসে ঐ সন্দ্বীপ মান্ডীর পায়ে আঘাত করেন। সন্দ্বীপ মান্ডী পড়ে যান। উঠে গিয়ে শাকিলের দিকে তেড়ে যান এবং ক্ষুব্ধ প্রকাশ করেন সন্দ্বীপ মান্ডী-কিউ তু মুঝে ফাঊল আ রাহা হ্যায়? কিউ? কিউ? ডি বক্সের আশেপাশে শাকিল ঐ একই ঘটনায় বার বার ফাউল করে খেলছিলেন সন্দ্বীপ মান্ডীর সাথে। বার বার ট্যাকলে টিকে যান সন্দ্বীপ মান্ডী। কিন্তু শাকিল? অগত্যা শাকিল অসহায়ের মতো তাকিয়েছিলেন ঐ ক্ষোভ ঝরানো সন্দ্বীপ মান্ডীর আচরণে। অবশ্য রেফারি শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এই দৃশ্য অবলোকন করেছেন। রেফারির ভাষ্যমত-ওটা পজিটিভ প্লে ছিল।
ঝিনাইদহ জেলা যুব দল, খুলনা, বাংলাদেশ: সোহান ২২, সুমন ৫, শানু ৪, মুন্না ৩, রিয়াজ ৬ (নয়ন ১৫), রহমান ৭, রকি ৮ (১৪), রিজন ১১, শাকিল ১২, টিটু ১০ (অধিনায়ক) ও রনি ৯।
কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমি, পশ্চিমবাংলা, ভারত: সুদীপ হালদার ১, নীলকমল ৩ (অধিনায়ক), সন্দ্বীপ মান্ডী ১৪, বিকাশ মুর্মু ২, শিবম সিং ৮, সুফল সরকার ৯, সমরায় সোরেন ৫ (অংকর বিশ্বাস ৬), সিকান্দার মন্ডল ৭, পরিমল হেমব্রাম ১২ (সৌরভ পাল ১৬), কিশান সোরেন ১০ ও পিন্টু মুর্মু ১১।
রেফারি: শাহ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ। সহকারী রেফারি: জামাল হোসেন ও শেখ মোহাম্মদ বেলাল হোসেন। ৪র্থ সহকারী রেফারি: রবিউল ইসলাম।
প্রীতি ম্যাচ খেলা শেষে সফররত কল্যাণী স্পোর্টস একাডেমি ও ঝিনাইদহ জেলা যুব দলের খেলোয়াড়দের সুদৃশ্য ট্রফি তুলে দেয়া হয়। এই সময় উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র সাইদুল করিম মিন্টু, জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাম্মী ইসলাম, জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক জীবন কুমার বিশ্বাস, ডিএসএ’র নির্বাহী সদস্য জয়নাল আবেদীনসহ স্থানীয় ক্রীড়া সুধীমহলের অন্যান্য ব্যক্তিবর্গ।
বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান স্টেডিয়ামে প্রচুর সংখ্যক পুরুষ ও নারী দর্শক উপস্থিত ছিলেন। ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর বন্ধনকে আরো সুসংহত করতে উভয় দলের খেলোয়াড়দের সমানভাবে উৎসাহ দিয়েছেন স্থানীয় দর্শকরা। ফলে দর্শকরাও যথেষ্ট আনন্দ পেয়েছেন।
বিডিস্পোর্টস২৪ ডটকম/বিকে